ঢাকা , মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার ভাঙনে দিশাহারা হাজারো পরিবার শুল্ক চাপে ব্যবসা-বাণিজ্য হঠাৎ অস্থির শিক্ষাঙ্গন বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান ফেব্রুয়ারির নির্বাচনই বিএনপির সামনে এখন চ্যালেঞ্জ-মির্জা ফখরুল পুরুষশূন্য জোবরা গ্রাম, চবি ক্যাম্পাসে উৎকণ্ঠা অর্ধশত শিক্ষার্থীর মাথায় অস্ত্রের কোপ অনেকের থেঁতলে গেছে হাত-পা নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই -আসিফ নজরুল আরও ৭ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা নীতিমালা সংশোধন ভোট কক্ষের সংখ্যা কমছে নির্বাচনে তিন বাহিনীকে কাজে লাগানো হবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নতুন কৌশল নতুন চ্যালেঞ্জে নির্বাচন কমিশন ২১৩০ কোটি টাকায় আলেকজান্ডারকে দলে ভেড়ালো লিভারপুল ফাইনাল হেরে কর্মকর্তার মুখে থুতু দিলেন সুয়ারেজ! ভায়োকানোর বিপক্ষে হোঁচট খেলো বার্সা মাঠে ডিম পাড়লো পাখি, এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো স্টেডিয়াম পুরুষদের থেকেও বেশি প্রাইজমানি ঘোষণা নারী বিশ্বকাপে! পোরশায় ডেঙ্গু সহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে এক বর্ণাঢ্য র‍্যালিও পরিছন্নতা অভিযান অনুষ্ঠিত অক্টোবরে বাংলাদেশ সফরে আসছে উন্ডিজ বিপিএলে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পেল ‘আইএমজি’

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার ভাঙনে দিশাহারা হাজারো পরিবার

  • আপলোড সময় : ০১-০৯-২০২৫ ১০:৫৯:৫৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৯-২০২৫ ১০:৫৯:৫৩ অপরাহ্ন
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার ভাঙনে দিশাহারা হাজারো পরিবার
রাজশাহী প্রতিনিধি
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভারত সীমান্তবর্তী চার ইউনিয়নে প্রতিদিন তীব্র হচ্ছে পদ্মার ভাঙন। নদীর স্রোতে হারিয়ে গেছে শত শত বসতবাড়ি, হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাঙনের ফলে হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বিজিবির ক্যাম্পও ভাঙন ঝুঁকিতে আছে। সব মিলিয়ে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ পদ্মা পাড়ের মানুষের দিনরাত কাটছে ভাঙন ও অস্তিত্ব হারানোর আতঙ্কে। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকেও হারাতে বসেছে পদ্মা পাড়ের কয়েকটি গ্রাম। দিশাহারা অবস্থায় আছে নদীপাড়ের অন্তত এক হাজার পরিবার। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই বছরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ও দেওপাড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার চর আলাতুলি ও চর দেবীনগর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম গত দুই বছরে বিলীন হয়েছে পদ্মায়। ভাঙনের কারণে কেউ কেউ একাধিকবার বাড়িঘর সরিয়েছেন দূরে। তারপরও রেহাই মেলেনি। তাদের বাকি সম্বলও এখন ঝুঁকির মুখে। এ অবস্থায় সাময়িক প্রতিরক্ষা নয়, এখন জরুরিভাবে দরকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ। স্থায়ী সমাধান না হলে অচিরেই পুরো সীমান্তবর্তী গ্রাম ও অবকাঠামোগুলো বিলীন হয়ে যাবে। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে কয়েকটি গ্রাম। ভাঙনকবলিত মানুষের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নদীতীর সংরক্ষণ বাঁধের নির্মাণকাজে গাফিলতির কারণে ভাঙন থেকে বসতবাড়ি ও আবাদি জমি রক্ষা করা যাচ্ছে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর আলাতুলি ইউনিয়নের কৃষক মো. ছিদ্দিক বলেন, একসময় আমাদের গ্রামে এক হাজারের বেশি বাড়ি ছিল। এখন অর্ধেকও নেই। পদ্মা সব নিয়ে গেছে। বাকি যারা আছি, জানি না কয়দিন থাকতে পারবো। আমরা চাই টেকসই বাঁধ। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হলে আমাদের অস্তিত্ব টিকবে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জের দেবিনগর পোলাডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ভাঙনের মুখে। একসময় পদ্মা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে থাকা ব্রিজটি এখন স্রোতের পাশে দাঁড়িয়ে। গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র এই ভরসা পদ্মায় বিলীন হওয়ার পথে। চর আষাড়িয়াদহ ও দেওপাড়া এবং চর আলাতুলি ও চর দেবীনগর ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের হিসাবে, গত এক দশকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকটি গ্রামের পদ্মার ভাঙনে অন্তত ১০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। হারিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমি, বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা। এখনও অন্তত এক হাজার পরিবার নদীভাঙনের হুমকিতে আছে। তারা দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে। দেবীনগর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য মারফত আলী বলেন, পদ্মার ভাঙনে প্রতিনিয়ত সঙ্কুচিত হচ্ছে গ্রামগুলো। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে পোলাডাঙ্গ ও হরমা গ্রাম। ভাঙনের কারণে সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিজিবি ক্যাম্পও ঝুঁকিতে পড়েছে। যদি ক্যাম্প নদীগর্ভে চলে যায় তবে সীমান্ত এলাকা কার্যত নিয়ন্ত্রণে নেবে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এতে সীমান্ত নিরাপত্তায় ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে। এখনও আমাদের গ্রামের প্রায় সাড়ে চারশ পরিবার আর হাজার একর জমি টিকে আছে জানিয়ে দেবীনগর ইউনিয়নের পোলাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সেন্টু আলী বলেন, যদি ভাঙন প্রতিরোধ করা না যায়, তবে আমরা শুধু ঘরবাড়ি হারাবো না সীমান্তও হুমকির মুখে পড়বে। চর আলাতুলির গৃহবধূ রেহানা খাতুন বলেন, প্রতিবারই পদ্মার ভাঙনে ঘরবাড়ি রাতারাতি সরাতে হয়। শিশু, বৃদ্ধ, গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে নিরাপদে থাকার কোনো উপায় নেই। রাতে ঘুমাতে পারি না। মনে হয় কখন ভিটেমাটি পদ্মা নিয়ে যায়। একেক সময় মনে হয়, ঘরবাড়ির সঙ্গে আমরাও ভেসে যাবো। দেবীনগর ইউনিয়নের হরমা গ্রামের আমিন আলী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তা টেকসই হয়নি। যে ব্যাগে ২৫০ কেজি বালু ভরার কথা, সেখানে মাত্র ১০০ কেজি ভরে দায়সারা কাজ করা হয়েছে। এভাবে কাজ করলে নদীকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এ বিষয়ে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ‘ইতোমধ্যে কয়েকটি জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলছে। ভাঙন ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে স্রোত তীব্র হওয়ায় প্রতিরক্ষা কাজ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘চর আাষাড়িয়াদহ ওই ইউনিয়নে ভাঙনকবলিত এলাকা ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাঙনরোধে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা কাজ করছে বলে আমাদের জানিয়েছে। এদিকে রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার ভাঙনে খোলা আকাশের নিচে ছয়টি পরিবার বসবাস করছে। গত ২৮ আগস্ট রাত ১০টার পর থেকে চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাসখালী পাড়ের এই পরিবারগুলো বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৮ আগস্ট রাত ১০টার দিকে প্রায় ১০০ মিটার এলাকার আম, মেহগনি গাছসহ তাদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। হুমকিতে রয়েছে আরও ২০-২৫টি বাড়ি ও চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়। বাড়িঘর হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন কালিদাসখালী চরের আলী হোসেন, আলী ফকির, জয়নাল হোসেন, হাসিনুর রহমান, মোবারক হোসেন ও উজির উদ্দিন। আলী ফকির বলেন, বাড়িঘর ভেঙে পদ্মার তীরে রেখেছি। কোনো জায়গা পাচ্ছি না। সব ভিটেমাটি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন বাড়ি করার জায়গা নেই। নিরুপায় হয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছি আমরা। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত কয়েক দিনের ভাঙনে বাড়িঘর সরিয়ে নিয়ে গেছে আরও অর্ধশতাধিক পরিবার। শত শত বিঘা ফসলি জমি ও আম বাগান, পেয়ারা বাগান, বরই বাগান পদ্মায় চলে গেছে। বাঘার চকরাজাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ভূমিহীনদের জন্য বাড়ির ব্যবস্থা করলে হয়তো নদীভাঙা মানুষগুলো সেই বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করতে পারতো। নদী ভাঙতে ভাঙতে নিঃস্ব হয়ে গেছে তারা। যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। কোনো উপায় না পেয়ে অনেকে অন্যের জমির ওপর চালা করে বসবাস করছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে অনেকের বাড়ি ও আম বাগান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আরও অনেকের বাড়িঘর হুমকির মধ্যে রয়েছে। এবার যে ভাঙনের ডাক, তাতে মনে হয় কালিদাসখালী ও লক্ষীনগর বলে কোনো চিহ্ন থাকবে না। চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ফজলুল হক বলেন, চকরাজাপুর বলে কোনো চিহ্ন নেই। ইতোমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। এই ওয়ার্ডের তিন ভাগের দুই ভাগ পদ্মায় চলে গেছে। এবার যে হারে ভাঙা শুরু হয়েছে, এভাবে ভাঙতে থাকলে আর কিছু দিনের মধ্যে এই ওয়ার্ডও বিলীন হয়ে যাবে। একই কথা বলেছেন বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে পদ্মার পানি কমতে শুরু করেছে। পাশাপাশি শুরু হয়েছে ভাঙন। এবার যেসব জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে, তার সিংহভাগ জমিতে ছিল আম, মেহগনি গাছ ও বাড়িঘর। এই ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ২৬২ জন। পরিবার ছিল চার শতাধিক। ভাঙনের কারণে অর্ধশতাধিক পরিবার বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। অসহায়দের পাশে সবসময় থাকার চেষ্টা করছি। এখন সরকারি সহায়তা প্রয়োজন। বাঘার চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান বলেন, নদীভাঙনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে এখনও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তার বলেন, পদ্মার ভাঙনের বিষয়ে অবগত আছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য